২৭ জুল, ২০১৪

"লাউপাতায় ইলিশ পাতুড়ি"


শাউড়ি কটা কচি কচি লাউপাতা তুলে আনল মাচা থেকে। বৌ ততক্ষণে জ্যান্ত ইলিশমাছটাকে বঁটিতে কাটতে বসল। আর নাতবৌটা বসল কালো সরষে, পোস্ত আর নারকেল কোরা নিয়ে শিলে বাটতে। গিন্নী চেঁচিয়ে বললে" ওরে তুলসী মঞ্চের পাশে লঙ্কাগাছটা থেকে কটা টাটাকা কাঁচালঙ্কা তুলে আন দিকি। নাতবৌ চেয়ে নিল খান ছয়েক। বৌ বললে মাছের পিস পিছু একটা করে লঙ্কা নিবি বৌ। আর কটা লঙ্কা চিরে রাখবি। সরষের তেল বের করেছিস কৌটো থেকে? বৌ মাছগুলো ধুতে যাবে, শাউড়ি বললে, উঁহু কেটে ধুতে বলেছিলাম।  একবারের পর আর ধুবিনে বৌ। এবার ধবধবে সাদা সেই রূপোলী শস্যগুলো বৌয়ের হাত থেকে সোজা এল একটা টিফিনকৌটোর মধ্যে। তারপর তাতে পড়ল নুন ছিটেফোঁটা হলুদ, সর্ষে-পোস্ত-নারকেল-কাঁচালঙ্কা বাটা। বৌ মাখতে লাগল আর নাতবৌ ওপর থেকে ঢেলে দিল এক খাবলা সরষের তেল। এভাবে পড়ে র‌ইল সেই রূপোলী শস্য ঘন্টা দুয়েক। তারপর শাউড়ির পেড়ে আনা লাউপাতার মধ্যে একটা করে মাছ, একটা করে চেরা কাঁচালঙ্কা দিয়ে বন্দী হল পাতার মোড়কে। তারপর খড়কে কাঠি আটকে তাওয়ায় তেল মাখিয়ে রেখে দিল বৌ। দুমিনিট পরে উল্টে দিল। তারপর আবার পাল্টে  দিল বৌ খুন্তি দিয়ে আরো দুমিনিট ঐ ভাবে। সবশেষে গরম গরম ভাতের মাছে সোজা সেই রূপোলী শস্য এসে পড়ল ওদের থালার পরে। 
আমার দিদিমা নাম দিয়েছিলেন "লাউপাতায়  ইলিশ পাতুড়ি" দিদিমা অবিশ্যি গরমভাতের মধ্যে লাউপাতা গুলোকে রেখে দিতেন। তাতেই সেদ্ধ হয়ে যেত। পাতা-মাছ-মশলা-তেল শুদ্ধ ভাতে মেখে খেয়ে ফেলা যায়। কিছুই যায়না ফেলা। আমি তাওয়ার বদলে টেফলন কোটেড ননস্টিক প্যানে করলাম আজ। নাম দিলাম "হিলসা-টেফ্লোরা"  খুব সহজপাচ্য এই  ইলিশ পাতুড়ির  । আর তেল খুব কম লাগে ।

কোন মন্তব্য নেই: